সৌদি রাজপরিবারের মধ্যেই ক্রাউন প্রিন্সের ‘বিরোধিতা’
Published on Tuesday, November 20, 2018 at 5:27 pm
এমসি ডেস্ক : আল-সৌদ পরিবারের ওই সদস্যরা ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদের বাদশা হওয়ার ক্ষেত্রে বাধা দেওয়ার প্রস্তৃতি নিচ্ছেন বলে রাজপ্রাসাদ সংশ্লিষ্ট তিনটি সূত্রের বরাত দিয়ে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
রাজপরিবারের বিভিন্ন শাখার প্রিন্স ও মোহাম্মদের জ্ঞাতি ভাইদের অনেকেই সিংহাসনের উত্তরাধিকার প্রশ্নে পরিবর্তন দেখতে চান। তবে ৮২ বছর বয়সী বাদশা সালমান বেঁচে থাকা অবস্থায় এ বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ তারা নেবেন না বলে জানিয়েছে সূত্রগুলো।
পশ্চিমা বিশ্বে এমবিএস (মোহাম্মদ বিন সালমান) নামে পরিচিত ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ এখনো বাদশার প্রিয়পুত্র হওয়ায় তাকে সরিয়ে দেওয়ার দাবি উঠলেও সালমান তাতে কান দেবেন না বলেই অনুমান করা হচ্ছে।
রাজপরিবারের সদস্যরা এখন বাদশার মৃত্যুর পর তার ছোট ভাই ৭৬ বছর বয়সী প্রিন্স আহমেদ বিন আবদুলআজিজকে সিংহাসনে বসাতে আগ্রহী। বাদশা হলে ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদের এ চাচা পরিবারের সদস্যদের পাশাপাশি গোয়েন্দা ও নিরাপত্তা সংস্থা এবং কিছু পশ্চিমা দেশেরও সমর্থন পাবেন বলে সৌদি একটি সূত্র জানিয়েছে।
আড়াই মাস বিদেশে কাটিয়ে প্রিন্স আহমেদ গত মাসে রিয়াদে ফিরেছেন। বিদেশে থাকাকালে লন্ডনে তার বাসভবনের সামনে সৌদ সাম্রাজ্যের পতন চেয়ে বিক্ষোভকারীদের স্লোগানের প্রতিক্রিয়ায় সৌদি আরবের বর্তমান নেতৃত্বের সমালোচনাও করেছিলেন বাদশা সালমানের এ ছোটভাই।
২০১৭ সালে উত্তরাধিকার নির্ধারণ কমিটির যে তিন জ্যেষ্ঠ সদস্য এমবিএসকে ক্রাউন প্রিন্স বানানোর বিরোধিতা করেছিলেন, আহমেদ তাদের একজন ছিলেন বলেও দুটি সূত্র সেসময় নিশ্চিত করেছিল।
এ বিষয়ে প্রিন্স আহমেদ কিংবা তার প্রতিনিধিদের কারও মন্তব্য পাওয়া যায়নি। রিয়াদের কোনো কর্মকর্তাও উত্তরাধিকার প্রসঙ্গে রয়টার্সের যোগাযোগে তাৎক্ষণিকভাবে সাড়া দেননি।
সৌদি বংশে কয়েকশ প্রিন্স আছে। ইউরোপীয় রাজপরিবারের মতো এখানে রাজার পর স্বয়ংক্রিয়ভাবে তার জ্যেষ্ঠ পুত্র সিংহাসনের উত্তরাধিকার হতে পারেন না। সৌদি রাজপরিবারের ঐতিহ্য অনুযায়ী, বাদশা এবং পরিবারের বিভিন্ন শাখার জ্যেষ্ঠ সদস্যরা মিলে তাদের দৃষ্টিতে সিংহাসনের জন্য সবচেয়ে বেশি যোগ্য ব্যক্তিকেই উত্তরাধিকার হিসেবে মনোনীত করেন।
তবে ওই মনোনয়নই শেষ কথা নয়। বাদশার মৃত্যু কিংবা তিনি রাজকাজ পরিচালনায় অক্ষম হলে ৩৪ সদস্যের কাউন্সিলই নতুন বাদশা ঠিক করবেন। আগে থেকে ঠিক করে রাখা উত্তরাধিকারের বাদশা হতে হলেও কাউন্সিলের সম্মতি লাগবে। এমবিএসের ওপর থেকে সমর্থন প্রত্যাহার করে নেওয়া প্রভাবশালীরা এখন সেই ক্ষণেরই অপেক্ষা করছেন।
সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে যুক্তরাষ্ট্রের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও সৌদি রাজপরিবারের উপদেষ্টাদের সঙ্গে আলোচনায় প্রিন্স আহমেদকে পরবর্তী বাদশা বানালে সমর্থন দেওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছেন বলে এ প্রক্রিয়ার সঙ্গে সরাসরি সম্পর্ক আছে এমন বেশ কয়েকটি সূত্র রয়টার্সকে জানিয়েছে।
প্রায় চার দশক সৌদি আরবের স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করা আহমেদ দায়িত্ব পেলে এমবিএসের সামাজিক ও অর্থনৈতিক সংস্কারে কোনো রকম বদল আনবেন না বলেও আস্থাশীল সূত্রগুলো। সালমানের এ ভাই পশ্চিমা দেশগুলোর সঙ্গে রিয়াদের সামরিক চুক্তিগুলো বহাল রাখার পাশাপাশি রাজপরিবারের মধ্যে একতাও ফিরিয়ে আনবেন বলে মত তাদের।
যুক্তরাষ্ট্রের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলেছেন, খাশুগজি হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় জ্যেষ্ঠ আইনপ্রণেতাদের চাপ ও সিআইএর মূল্যায়নের পরও হোয়াইট হাউস এখনই এমবিএসের সঙ্গে দূরত্ব তৈরিতে আগ্রহী নয়।
তবে গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন পাওয়ার পর এ অবস্থান বদলেও যেতে পারে।
সোমবার রিয়াদে বাদশা সালমান তার ছেলের সমর্থনে যে ভাষণ দিয়েছেন হোয়াইট হাউস সেটিকে গুরুত্ব সহকারে দেখছে বলেও মত ওই মার্কিন কর্মকর্তার। সোমবারের ভাষণে সৌদি সরকারি কৌঁসুলির প্রশংসা ছাড়া খাশুগজি হত্যাকাণ্ড নিয়ে সরাসরি কিছু বলেননি সালমান।
খাশুগজি হত্যাকাণ্ডের নির্দেশ ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদের কাছ থেকেই এসেছিল বলে সিআইএর মূল্যায়নকে শনিবার ‘অসম্পূর্ণ, তবে হতে পারে’ বলেছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। মঙ্গলবার এ বিষয়ে পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন পাওয়া যাবে বলেও জানিয়েছিলেন তিনি।
এ প্রসঙ্গে ‘নতুন কিছু যোগ করার নেই’ বলে সোমবার হোয়াইট হাউসের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন।
কেবল খাশুগজি হত্যাকাণ্ডের জড়িত সন্দেহভাজন হওয়ার কারণেই নয়, সৌদি ক্রাউন প্রিন্স রাশিয়ার কাছ থেকে অস্ত্র কেনায় আগ্রহ দেখানোতেও ওয়াশিংটন তার ওপর ক্ষেপেছে বলে ধারণা সৌদি সূত্রগুলোর।
সৌদি প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়কে চলতি বছরের ১৫ মে লেখা মোহাম্মদের এ সংক্রান্ত একটি চিঠি দেখার কথাও জানিয়েছে রয়টার্স। চিঠিতে ক্রাউন প্রিন্স রাশিয়ার ভূমি থেকে আকাশে নিক্ষেপযোগ্য এস-৪০০ ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থাপনাসহ অত্যাধুনিক অস্ত্র ও যুদ্ধে ব্যবহৃত সরঞ্জাম কেনার ওপর জোর দিতে বলেছিলেন।
এ প্রসঙ্গে তাৎক্ষণিকভাবে রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বা রিয়াদের কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছে রয়টার্স।
Leave a Reply