রমেকহা’র চিকিৎসার ছাড়পত্র জালিয়াতী করে দিনাজপুরে মামলা; তদন্ত পি বি আই এ
Published on Tuesday, November 5, 2019 at 8:26 pm
এমসি ডেস্কঃ রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসা “রমেকহা” র ছাড়পত্র ও রংপুর সিয়াম ডায়াগনোস্টিক সেন্টারে প্রেগনেন্সি রির্পোট জালিয়াতী করে দিনাজপুর আদালতে মামলা করেছেন অন্তরা বেগম নামীয় এক মহিলা । সরেজমিন অনুসন্ধানে জালিয়াতীর সত্যতা পাওয়া গেছে ।
মামলার নথি পর্যালোচনায় জানা যায়, দিনাজপুরের বিরামপুর উপজেলা সিমান্তবর্তী মোহনপুর গ্রামের আব্দুর রাজ্জ¦াকের মেয়ে মোছা. অন্তরা বেগম (২৪) একই উপজেলার ধনসা গ্রামের মোখলেছার রহমানের পুত্র আল-আমিন (২৭) এর ২০১২সালের ২৯ আগষ্ট মুসলিম শরামতে ২লক্ষ ৫১ হাজার টাকা দেনমোহর ধার্যে নগদ ১৩হাজার ২শত টাকা পরিশোধে বিয়ে হয় ।
অন্তরা স্বামীর গৃহে ১৮ সপ্তাহের গর্ভধারন কালে ২০১৮ সালের ৫অক্টোবর শুক্রবার দুপুর ১টায় তার স্বামী তার গর্ভের সন্তান নষ্ট করার উদ্দেশ্যে তল পেটে লাথি মেরে জরায়ু দিয়ে রক্তপাত ঘটানোর অভিযোগে রমেকহার ভর্তির ছাড়পত্র এবং সিয়াম ডায়াগনোস্টিক সেন্টারের প্রেগনেন্সি রির্পোটের মুলকপি সংযুক্ত করে দিনাজপুর সি. জুডি. ম্যাজিস্ট্রেট আমলী আদালত-৬ (বিরামপুর) এ আল-আমিন সহ তার পিতা ও ভগ্নিপতি জিয়াউরকে অভিযুক্ত করে ৩২৩,৩৫৪,৩১৩,৩৪ দ. বি. আইনে একটি ইজাহার দায়ের করেন।
বিজ্ঞ আদালতের নির্দেশ মোতাবেক বিরামপুর থানার ইন্সপেক্টর তদন্ত ৬/৫৫২ (তাং ৬.১২.১৮) মামলাটির এম সি’র জন্য রমেকহার পরিচালক বরাবর আবেদন করেন। যার ডকেট নং ২০৯৫ (তাং ১২.১২.১৮) । উক্ত আবেদনের প্রেক্ষিতে পরিচালকের পক্ষে সহকারী পরিচালক (প্রশাসন) ডা. আবু সাঈদ মো. রফিকুজ্জামান ও জরুরী বিভাগের ইনচার্জ এর স্বাক্ষরীত প্রতিবেদন ৫.১.১৯. তারিখে ০১/১৯ স্মারকে বিরামপুর থানা অফিসার ইনচার্জ বরাবর প্রেরিত হয় । উক্ত প্রতিবেদনে স্পষ্টভাবে জানানো হয়, জরুরী বিভাগে ভর্তি রেজিস্টার ও সংশ্লিষ্ট গাইনী ওয়ার্ডের রেজিস্টার পর্যালোচনায় দেখা যায়, মোছা. অন্তরা বেগম (২৪) পিতা আব্দুর রাজ্জ্বাক বিরামপুর, দিনাজপুর নামীয় কোনো রোগী গত ০৫.১০.১৮ তারিখে অত্র হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য ভর্তি হয় নাই । ফলে কোনো সনদ প্রদান সম্ভব নয়। এবং সংশ্লিষ্ট ছাড়পত্রটিও সঠিক নয় ।
প্রতিবেদন পর্যলোচনায় নিবিড় তদন্ত শেষে অফিসার ইনচার্জ (তদন্ত) মো. সোহেল রানা ০১.১২.১৮তারিখে মামলাটির চুড়ান্ত রির্পোট আদালতে দাখিল করেন।
বাদীর না রাজির প্রেক্ষিতে দিনাজপুুর পিবিআই এর উপ-পুলিশ পরিদর্শক মনিরুল ইসলামের ওপর তদন্ত ভার অর্পন করা হয়। ০৩.১১.১৯ তারিখে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে মামলা আইও মনিরুল ইসলামের সাথে মুঠোফোনে কথা বললে তিনি অসংলগ্নভাবে জানান, এখনো রির্পোট দাখিল করা হয়নি। এই মামলা বিষয়ে আমি পিবিআই এর ডিআইজি অফিসে গিয়েছিলাম। স্যারদের নির্দেশে আল-আমিনের বিরুদ্ধে রির্পোট দাখিল করতে হবে। আমি স্যারদের নির্দেশের বাহিরে যেতে পারব না। মেডিক্যাল রির্পোটের সত্যতা পেয়েছি। চিকিৎসা সনদের জন্য তিনি আবেদন করেছে কিনা জানতে চাওয়া হলে এর উত্তরে তিনি বলেন, প্রয়োজন হলে চিঠি লিখবো।
বাদী অন্তরা বেগমের সহিত ৪ নভেম্বর মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি রংপুর চিকিৎসার জন্য গিয়েছিলেন বলে জানান । কার সঙ্গে গিয়েছিলেন বা কার মাধ্যমে ছাড়পত্র, রির্পোট সংগ্রহ করেছেন জানতে চাইলে বলেন, আমার লোকজন আছে তাদের সাথে কথা না বলে বলতে পারব না।
এদিকে ৫নভেম্বর আল-আমিনের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, কতিপয় প্রতারক ও কুচক্রি ব্যক্তির ফাঁদে পড়ে অন্তরা ভুয়া ও জাল ছাড়পত্র সংগ্রহ করে আমার ওপর মিথ্যা মামলা করেছে। এবং ওই ব্যক্তিরা আমাদের সংসার ভেঙ্গেছে। এই জাল ছাড়পত্রের বিষয়ে আমি তথ্য অধিকার আইনে রমেকহার পরিচালক বরাবর একটি আবেদন করলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ০১.১২.১৮তারিখে ১২২৫স্মারকে লিখিত ভাবে স্পষ্ট জানান, অন্তরা বেগম (২৪) পিতা আব্দুর রাজ্জ্বাক নামীয় কোনো রোগী ০৫.১০.১৮তারিখে ভর্তি হয় নাই। এবং ৩৪১৮/১৩ রেজি. ও ২৩ নং ক্রমিকের অন্তরা নামীয় ছাড়পত্রটি আদৌ সঠিক নয়।
এ মর্মে রমেকহার সহকারী পরিচালক প্রশাসন ডা. আবু সাঈদ মো. রফিকুজ্জামানে সঙ্গে ৩ নভেম্বর সকাল ১১টায় সরেজমিন সাক্ষাতে তিনি জানান, আমার স্ব ক্ষরীত যে প্রতিবেদনটি বিরামপুর থানায় এবং আল-আমিনের নিকট পাঠানো হয়েছে তা সর্বব্য সত্য । কোন ব্যক্তি মানবে না, সে আমাদের কাছে আসুক। পিবিআই আবেদন করুক । শেষে, জরুরী বিভাগের ভর্তি রেজিস্টার যাছাই করেও অন্তরা নামীয় কোনো রোগীর ভর্তির হদিছ মেলেনি।
সরেজমিনে, সিয়াম ডায়াগনোস্টিক সেন্টারে প্রেগনেন্সি রির্পোট প্রদানের সত্যতা জানতে চাইলে তারা রেজিস্টার খুলে দেখান ওই নামীয় কোনো রোগীই আসেনি । বিষয়টি জানতে পেরে ব্যবস্থাপনা পরিচালক আজিজুল ইসলাম রংপুর কোতয়ালী থানায় এই মর্মে একটি জিডি করেন যে অন্তরা নামীয় মহিলা ০৫.১০.১৮ তারিখের আমাদের সিয়াম ডায়গনোস্টিক সেন্টারে কোনো পরীক্ষার জন্য আসেনি। আমাদের ক্ষতি করার অভিপ্রায়ে এই প্রেগনেন্সি রির্পোট জালিয়াতি করা হয়েছে। জিডি নং ১৫৩ তারিখ ০৩.১১.১৯ মোবাঃ ০১৭২৩৬৭৩০৬২।
Leave a Reply