যে কৌশলে ৪০০ বাংলাদেশিকে লিবিয়ায় পাঠায় কামাল চক্র
Published on Monday, June 1, 2020 at 9:23 pm
এমসি ডেস্ক : লিবিয়ার মিজদাহ শহরে নৃশংসভাবে ২৬ বাংলাদেশিকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় দেশ-বিদেশে ব্যাপক আলোচনার সৃষ্টি হয়। ওই বাংলাদেশিরা সবাই অবৈধ পন্থায় লিবিয়া হয়ে ইউরোপ যাওয়ার চেষ্টা করছিলেন। এরপরই এ ঘটনার তদন্তে নামে র্যাব-৩। ইতোমধ্যে মানবপাচারী দলের মূল হোতা মো. কামাল উদ্দিন ওরফে হাজী কামালকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
আজ সোমবার সকালে রাজধানীর গুলশান থানাধীন শাহজাদপুরের বরইতলা বাজার খিলবাড়িরটেক এলাকা থেকে হাজী কামালকে গ্রেপ্তার করে র্যাব-৩ এর একটি দল। এরপরই বেরিয়ে আসে চাঞ্চল্যকর সব তথ্য। পেশায় টাইলস ব্যবসায়ী হাজী কামাল গত ১০ বছর ধরে অবৈধ পন্থায় মানবপাচার করে আসছেন। অধিক ইনকামের লোভ দেখিয়ে এখন পর্যন্ত ৪০০ বাংলাদেশিকে লিবিয়ায় পাচার করেছেন তিনি।
জানা গেছে, টাইলস ব্যবসার আড়ালে মূলত মানবপাচার করে যাচ্ছিলেন এই ব্যক্তি। এক্ষেত্রে লিবিয়ায় টাইলস-শ্রমিকের চাহিদা অনেক এবং দিনে ৫/৬ হাজার করে টাকা ইনকামের সুযোগ রয়েছে বলে মানুষদের লোভ দেখাতেন। এরপর কয়েক ধাপে তাদের বিদেশে পাঠান এবং পরিবারগুলোর কাছ থেকে অর্থ আদায় করেন।
এ বিষয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে র্যাব-৩ অধিনায়ক (সিও) লে. কর্নেল রকিবুল হাসান বলেন, মিথ্যা আশ্বাস প্রদান করে বিদেশে কর্মসংস্থানের প্রলোভন দেখিয়ে দীর্ঘ প্রায় ১০ বছর যাবত এই অপরাধের সাথে সম্পৃক্ত আছেন হাজী কামাল। তার সংঘবদ্ধ চক্রটি বিভিন্ন যোগসাজশে অবৈধভাবে বাংলাদেশি নাগরিকদের মধ্যপ্রাচ্য-ইউরোপে প্রেরণ করে আসছে। এক্ষেত্রে তিনটি ধাপে তারা এই কাজ সম্পন্ন করেন।
প্রথমে বিদেশে গমনেচ্ছুদের নির্বাচন করেন। এরপর দেশীয় এজেন্টদের মাধ্যমে প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলের মানুষদের অল্প খরচে উন্নত দেশে পাঠানোর প্রলোভন দেখিয়ে আকৃষ্ট করেন। ভাগ্য পরিবর্তনের আশায় অনেকেই তাদের প্রস্তাবে সাড়া দেন এবং এই সিন্ডিকেটের তত্ত্বাবধানে পাসপোর্ট তৈরি, ভিসা সংগ্রহ, টিকেট ক্রয়- প্রভৃতি সম্পন্ন করেন। পরবর্তীতে ধাপে ধাপে কিস্তি নির্ধারণ করে তাদের বিদেশে পাড়ি দেয়ার ব্যবস্থা করা হয়।
সিন্ডিকেটের সদস্যরা প্রার্থীদের সামর্থ্য অনুযায়ী ইউরোপ গমনের ক্ষেত্রে ৭/৮ লাখের বেশি টাকা নিয়ে থাকে। এর মধ্যে সাড়ে ৪-৫ লাখ টাকা লিবিয়ায় যাওয়ার আগে এবং বাকি আড়াই থেকে তিন লাখ টাকা লিবিয়ায় যাওয়ার পর ভিকটিমের পরিবারের কাছ থেকে আদায় করা হয়।
বাংলাদেশ থেকে লিবিয়ায় প্রেরণের ক্ষেত্রে সাধারণত বাংলাদেশ-কলকাতা-মুম্বাই-দুবাই-মিশর-বেনগাজী-ত্রিপলি (লিবিয়া) রুট ব্যবহার করা হয়। তবে সুযোগ-সুবিধা অনুযায়ী মাঝেমধ্যে এই রুট পরিবর্তন অথবা নতুন রুট নির্ধারণ করা হয়ে থাকে।
লিবিয়ায় পৌঁছানোর পর সিন্ডিকেটের সদস্যরা ভিকটিমের পরিবারের কাছ থেকে প্রথমে মূল টাকা আদায় করেন। এরপর অন্যান্য পাচারকারী দলের সদস্যরা তাদের জিম্মি করে অতিরিক্ত টাকা দাবি এবং শারীরিক নির্যাতন করে সেই ভিডিও ভিকটিমদের পরিবারের কাছে পাঠাতো। তখন কোনো উপায় না পেয়ে জীবন বাচাঁনোর জন্য পাচারকারী দলের চাহিদা মোতাবেক টাকা পাঠাতে বাধ্য হয় ভিকটিমদের পরিবার।
Leave a Reply