বাংলালিংকে ডগ স্কোয়াড, ইন্টারোগেশন সেল!
Published on Tuesday, February 16, 2016 at 11:17 am
সিসি নিউজ: ইন্টারোগেশন সেলে জিজ্ঞাসাবাদে এক সহকর্মীর অসুস্থ হয়ে পড়া, হয়রানি ও চাকরিচ্যুতির প্রতিবাদে বিক্ষোভ করেছে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম মোবাইল অপারেটর বাংলালিংকের কর্মকর্তা-কর্মচারিরা।
দিনভর তাদের বিক্ষোভের মুখে অচলাবস্থা তৈরি হয় মোবাইল কোম্পানীটির প্রধান কার্যালয়ে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে প্রধান কার্যালয়সহ সারাদেশে বাংলালিংকের কর্মকর্তা-কর্মচারিদের ছুটি দেওয়া হয়েছে।
রোববার সকাল থেকে গুলশানে প্রধান কার্যালয়ের সামনে নিরাপত্তা কর্মী ছাড়াও বসানো হয় ডগ স্কোয়াড। অফিসে ঢুকতে গিয়ে ডগ স্কোয়াডের কামড়ে আহত হন একজন।
প্রতিষ্ঠানটির একজন বিক্ষুব্ধ কর্মকর্তা বলেন, ‘আমাদের কিছু লোক কমানো দরকার, খরচ কমানো দরকার। কিন্ত আমাদের যে সিইও এসেছেন উনি হেলিকপ্টার নিয়ে চট্টগামে যান। ওনার জন্য আড়াই কোটি দামের গাড়ি কেনা হয়েছে।’
তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, ‘আমরা যারা ৫০ হাজার বা ৩০ হাজার টাকা করে বেতন পাই তাদের বছরে বেতন বাড়ে মাত্র এক শতাংশ বা দুই শতংশ।’
প্রধান কার্যালয়ের ভেতরে নিজস্ব ইন্টারোগেশন সেলে বেশ কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন বাংলালিংকের নিরাপত্তায় নিয়োজিত শৃঙ্খলা বাহিনীর কয়েকজন সাবেক কর্মকর্তা। জিজ্ঞাসাবাদের সময় অসুস্থ হয়ে পড়া এক কর্মকর্তাকে অচেতন অবস্থায় ইউনাইটেড হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
আরেক জন কর্মকর্তা বলেন, ‘আমরা আগে চাকরির আতঙ্কে ভুগছিলাম। এখন জীবন নিয়ে শংকায়আছি। আমরা কী করছি জানিনা; তবে তারা বিভিন্ন ধরণের ভয় ভীতি দেখাচ্ছে।’
অসুস্থ হয়ে পড়া সেই কর্মকর্তা সর্ম্পকে তিনি বলেন, ‘সে ওখানে অজ্ঞান হয়ে স্টোক করার পর এখন ইউনাইটেড হাসপাতালে আছে। এটা যে কাল আমার ক্ষেত্রে হবে না, তা আমি নিশ্চিত করে বলতে পারি না।’
নাম প্রকাশ না করে আরেকজন কর্মকর্তা বলেন, আমরা চাচ্ছি ভীতির বাইরে শান্তিপূর্ণভাবে চাকুরি করতে। কারণ এখানে যে প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়েছে, সে প্যাকেজ কার জন্য কার্যকর হবে আমি তা জানি না। তবে এখানে যারা আছে তাদের জন্য না, কারণ তারা নিয়ম মানে নাই।’
দুপুরের পর কোনো এক সময় ইলেকট্রনিক মিডিয়ার কয়েকজন সাংবাদিককে ভেতরে ডেকে প্রধান বাণিজ্যিক কর্মকর্তা জানান, এক কর্মকর্তাাকে বরখাস্ত করা হলেও আইনের মধ্যে থেকেই তা করা হয়েছে। এটা জানার পর আবারও বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠেন কর্মকর্তা কর্মচারীরা।
বাংলালিংকের পক্ষে যে গণমাধ্যম কর্মীদের ভেতরে ডেকে নিয়ে বক্তব্য জানানো হয় তাদের বাইরে অন্য সাংবাদিকরা বাংলালিংকের আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানার চেষ্টা করলেও তাদের ভেতরে ঢুকতে বাধা দেয়া হয়। বিকাল বেলায় প্রতিষ্ঠানটির ঊর্ধতন কর্মকর্তারা অফিস ছেড়ে চলে গেলে শান্ত হয় পরিস্থিতি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এ অচলাবস্থার শুরু হয় প্রতিষ্ঠানটির ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকসন্স ডিপার্টমেন্টের প্রধান প্রকৌশলী শরিফুল ইসলাম ভুঁইয়াকে ট্রেড ইউনিয়ন করার অপরাধে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় চাকরিচ্যুত করার পর।
এ ঘটনার জেরে ওইদিন সন্ধ্যায় গুলশান-১ এলাকায় অবস্থিত বাংলালিংকের প্রধান কার্যালয়ের তৃতীয় তলায় চিফ টেকনিক্যাল অফিসার (সিটিও) তেরিহান এলহামি (মিশরের নাগরিক) কয়েশ কর্মী অবরুদ্ধ করে রাখেন।
পরে আজকের বৈঠকে চাকরিচ্যুতির বিষয়টি বিবেচনার আশ্বাস দেওয়া হলে ওই দিন গভীর রাতে আন্দোলনকারীরা তাদের অবস্থান তুলে নেন।
কিন্তু কর্তৃপক্ষ তাদের ওয়াদাভঙ্গ করেন বলে অভিযোগ করে এক কর্মকর্তা বলেন, ‘রোববার দুপুরে বাংলালিংক এমপ্লয়িজ ইউনিয়নের সাংগঠনিক সম্পাদক পাওয়ার অ্যাসিসট্যান্ট ম্যানেজার মো. মোস্তাককে ডেকে নেন। এরপর কয়েকজন কর্মকর্তা তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে শুরু করলে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন।’
এই খবর পেয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারিরা আরো বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। এক পর্যায়ে প্রতিষ্ঠানে ছুটি ঘোষণা করা হয়।
Leave a Reply