নারীপোশাক শ্রমিকদের মূল্যায়ন করতে হবে
Published on Wednesday, September 11, 2019 at 8:01 pm
-কৈলাশ প্রসাদ গুপ্ত
সৃষ্টির আদিতে নারী। পৃথিবীতে প্রথম কৃষি কাজের সূচনা করে নারী। সূক্ষ্ণাতিসূক্ষ্ণ
কাজ করতে পারে নারী। প্রকৃতিগত ভাবে ধৈর্য, সহনশীলতা সহ অন্যান্য গুণের অধিকারী নারী। তাই নকশীকাথা তৈরী হয়েছে নারীর হাত দিয়ে। বিশ্ব দরবারে শিল্পের সৌন্দর্যে শ্রেষ্ঠত্বের আসন অধিকার করেছে। সুঁচে সুতা পড়ানোর কাজে নারীর ধৈর্য ও একাগ্রতা রয়েছে।এমনি অনেক সূ² কাজেও রয়েছে তাদের আগ্রহ ও একাগ্রতা। যার ফলে পাশাক শিল্পগুলো টিকে রয়েছে এবং বিশ্ব বাজারে মানসম্মত পোশাকের জায়গা দখল করে নিতে পেরেছে।
এ অবদান নারী পোশাক শ্রমিক শিল্পীদের। তাই এ নারী শ্রমিকদের যথাযথ মূলায়ন করতে হবে। নারী পুরুষের মধ্যে কোন বেতন বৈষম্য করা চলবে না। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থান আইন অনুুযায়ী তাদের সকল সুযোগ সুবিধা দিতে হবে। তাদের স্বাস্থ্যকর পরিবেশে কাজের ব্যবস্থা করতে হবে। ভবিষ্যতে অতীতের মত কোন গার্মেন্টস কারখানয় আর যেন কেউ আগুনে পুড়ে মৃত্যু বরন না করে। কিংবা বিল্ডিং ধ্বসে আর যেন কারও মৃত্যু না হয়। ঈদের পূর্বে বেতন বোনাসের জন্য কারখানার গেটে যেন ধর্ণা দিতে না হয়। গণ প্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারকে ধন্যবাদ। এবার সরকারের শিল্প মন্ত্রনালয়ের মন্ত্রী মহোদয় সহ সংশ্লিষ্ট সকলের সময়পোযোগী পদক্ষেপ গ্রহণ করায় সব কারাখানার শ্রমিকরা পবিত্র ঈদুল আযহার পূর্বে বেতন ভাতা পেয়েছে। নারীদের মাতৃত্বকালীন ৬ মাসের বেতন সহ ছুটি পেতে যেন কোন গড়িমসি না হয় সেটি সরকারের সংশ্লিষ্ট সবাইকে নিশ্চিত করতে হবে। মাতৃত্বকালীন ছুটি শেষে শিশু সন্তান নিয়ে একজন মা শ্রমিক কাজ করতে পারে এরূপ উপযোগী পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে। অতীতের যেসব পঙ্গু শ্রমিক রয়েছে তাদের উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ সহ তাদের বেঁচে থাকার নূন্যতম পথ করে দিতে হবে। পোশাক শিল্পে চাকুরী করে নারী শ্রমিকরা তাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়নি, শোষিত হয়নি, নির্যাতিত ও নিপীড়িত হয়নি এমন দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পারলে ভবিষ্যতে এই শিল্প টিকে থাকবে। দেশের প্রবৃদ্ধি বৃদ্ধিতে অবদান রাখছে এবং রাখবে।
ভয়ংঙ্কর একটি সংবাদ হল ভারতের প্রবৃদ্ধি কমে যাওয়ায় তাদের গাড়ী শিল্পে ধ্বস নেমেছে। কারখানায় অবিক্রিত গাড়ীর স্তুপ জমেছে। শ্রমিক ছাটাই চলছে। আমাদের দেশের নারী শ্রমিকরা গার্মেন্টস শিল্পকে তাদের ঘামে-শ্রমে, মানবতর জীবন-যাপন করেও টিকিয়ে রেখেছে এখন পর্যন্ত। দেশের প্রবৃদ্ধি বৃদ্ধিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করছে। এদের যথাযথ মূল্যায়ন না করা হলে ধাপে ধাপে নারীরা এই শিল্প থেকে মুখ ফিরিয়ে নিতে পারে।
আমাদের দেশে গার্মেন্টস শিল্পের ওপর যে শিক্ষা ব্যবস্থা চালু রয়েছে তা সারা বাংলাদেশের মাধ্যমিক পর্যায়ের ছাত্র-ছাত্রীদের জানানোর ব্যবস্থা করতে হবে। যাতে করে শিক্ষিত, দক্ষ পোশাককর্মী গড়ে তোলা যায়। পোশাক শ্রমিকেরা দেশের জন্য বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছেন। এদের বড় অংশই নারী। তাই সমাজে সার্বিকভাবে পোশাক শিল্পের সাবলম্বিতার পেছনে নারীর ভূমিকা অনেক। তাই তাদের কল্যানে জীবন মানের উন্নয়নে সমাজরে ন্যায় কাজ করাই উচিৎ। কারণ-
বিশ্বের যাকিছু মহান সৃষ্টি চির কল্যান কর অর্ধেক তার করিয়াছে নারী, অর্ধেক তার নর।- কাজী নজরুল ইসলাম।
এই নারীদের অক্লান্ত শ্রমে ঘামে গড়ে উঠেছে একের পর এক গার্মেন্টস ফ্যাক্টরি। একজন গার্মেন্টস মালিক একটি গার্মেন্টস ফ্যাক্টরি থেকে কয়েকটি গার্মেন্টস ফ্যাক্টরির মালিক হয়েছেন। এর পেছনে এই নারী পোশাক শ্রমিকদের অবদানই মুখ্য। নারীর ভিতর রয়েছে সৃষ্টির শপথ। অতএব তাদের অবহেলা নয়। পোশাক শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে হলে, দেশের প্রবৃদ্ধি বৃদ্ধি করতে হলে নারী পোশাক কর্মীদের যথাযথ মূল্যায়ন করতে হবে।
কৈলাশ প্রসাদ গুপ্ত
কাটাবাড়ি, ফুলবাড়ী, দিনাজপুর।
মোবাইলঃ ০১৭২২৬৭৩২৭৭
Leave a Reply