দিনাজপুরে চক্ষু বিশেষজ্ঞরা বেপরোয়া, দেখার যেন কেউ নেই
Published on Sunday, May 12, 2019 at 10:39 am

এমসি ডেস্ক: দিনাজপুরে চক্ষু বিশেষজ্ঞদের ছড়া ছড়ি। এখানটায় এত বেশি সুবিধা যে, দিনাজপুর ছাড়তেই তারা চাননা। তারা যে যার মতো করে চলছেন-সরকারি কোন নিয়ম কানুনের কোন তোয়াক্কাই করে না। ভাবখান এমন! যেন দিনাজপুরের পরিবেশটা তাদের কাছে মগের মুল্লুকের মতো। কাকে রেখে কার কথা বলব! তারা সবাই দিনাজপুর গাউসুল আযম চক্ষু হাসপাতালে কর্মরত। অভিযোগ আছে, দিনাজপুরে চক্ষু বিশেষজ্ঞরা নিজ নিজ চেম্বারেই ক্লিনিক খুলে বসেছেন। সেখানেই তারা চক্ষু রোগীদের অপারেশন করছেন। অপারেশনের সময়টি তারা বেছে নিয়েছেন গভীর রাত্রীতে। সাধারনত বেশির ভাগ অপারেশন হয় গভীর রাত্রে। স¤প্রতি ফুলবাড়ী অনলাইন প্রেসক্লাব ও আরজেএফ জেলা শাখার সাংবাদিকরা সরেজমিনে তথ্য নিতে উপশহরে অবস্থিত চক্ষু বিশেষজ্ঞ ডাঃ আনসার আলীর চেম্বারে গেলে সেখানে অপারেশনের জন্য অপেক্ষমান ছিলেন ৫ জন রোগী। তখন সময় রাত্রী ৯টা ৩০মিনিট, তখনও ঐ চিকিৎসক চেম্বারে অনুপস্থিত। খবর নিয়ে জানা গেল, তিনি ঠাকুরগাঁয়ের পীরগঞ্জ চেম্বারে রোগী দেখতে গেছেন, আসতে তাই দেরি হচ্ছে। আমাদের সাংবাদিকদের পুরো টিমও অপেক্ষা করছে তার জন্য। অবশেষে তিনি তার দিনাজপুরের চেম্বারে হাজির হলেন, রাত্রী ১০ টাক ২৫ মিনিট! যথারীতি সাংবাদিকরা তার মুখোমুখি। তিনি একজন বয়জোষ্ঠ চিকিৎসক। তাকে প্রশ্ন করা হলো ঃ আপনার এই চেম্বারেই আজ রাতে ৫ জন রোগীর অপারেশন করা হবে। এই অপারেশন গুলি কি আপনি করবেন? উত্তরে তিনি বলেন, হ্যা আমি অপারেশন করি। প্রশ্ন করা হলো, রাত তো অনেক হয়েছে তাছাড়া আপনি ভ্রমন করেও ক্লান্ত। চোখের অপারেশন তো সেনসেটিভ, এ অবস্থায় অপারেশন গুলি ভালো হওয়ার কথা না। পাশাপাশি রোগীরাও ক্ষতিগ্রস্থ হতে পারেন? উত্তরে তিনি, নিশচুপ ছিলেন। আরো জানতে চাওয়া হয়, আপনার চেম্বারটি তো ক্লিনিকের মতো ব্যবহার করছেন। ব্যক্তিগত চেম্বারে কি অপারেশন করার অনুমতি আছে? উত্তরে তিনি বলেন, অপারেশনের অনুমতি না থাকলেও আমি সংশ্লিষ্টদের অনুমতি নিয়েই ১৯৯২ সাল থেকে অপারেশন করে আসছি। এবার কথা হয়, অপর চক্ষু বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকটি জামানের সাথে। তার চেম্বারে গিয়েও দেখা গেল ৬ জন অপারেশনের রোগী। যাদের চোখ আজকেই অপারেশন করা হবে। জানতে চাওয়া হলো, আপনার কি ব্যক্তিগত চেম্বারে অপারেশন করার অনুমতি আছে? উত্তরে তিনি বলনে, সাধারনত বড় অপারেশন গুলি অন্যত্র রেফাড করি। ছোট-খাটো অপারেশন গুলি আমি নিজেই চেম্বারে করি। অনুমতির বিষয়ে বলতে গেলে আমরা সাধারনত সংশিষ্টদের মৌখিক অনুমতি নিয়েই এ কাজ গুলি করছি। কাগজ কলমে কোন অনুমতি নেই।
আর এক চক্ষু চিকিৎসক ডাঃ ওয়াহেদা বেগম। তিনিও উপশহরের একটি বাড়িতে চেম্বার খুলে বসেছেন। যেখানে গিয়ে দেখা গেল, অপারেশনের জন্য ৩ জন রোগী প্রস্তুত করা আছে। সাংবাদিকরা চেম্বারের ভিতরে ঢুকতে চাইলে তিনি কোনভাবেই সাংবাদিকদের ভিতরে ঢুকতে দেন নি। অথচ সেই রাত্রে তার চেম্বারে বেশ কয়েকজন দালালকে বিচরণ করতে দেখা গেছে।
পরবর্তীতে এই বিষয় গুলি নিয়ে কথা হয় দিনাজপুর গাওসুল আযম ম্যানেজিং কমিটির সদস্যদের সাথে। তার বলেন, বিএনএসবি চক্ষু হাসপাতাল দিনাজপুর একটি বিদেশি সাহায্যপুষ্ট চিকিৎসা সেবা কেন্দ্র। এখানে প্রতিবছর ছয় হাজার দরিদ্র রোগীদের বিনামূল্যে অপারেশন ও লেন্স লাগানো হয়। বর্তমানে উপরোক্ত কারণে আর গাওসুল আযম চক্ষু হাসপাতালে এতো রোগী আর পাওয়া যায় না। হাসপাতালের আশেপাশে চক্ষু চিকিৎসকগণ তাদের চেম্বারেই দালালদের সহায়তায় অত্র হাসপাতাল থেকে রোগীদের ভাগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। তারা নিজের বাড়িতে ক্লিনিক বানিয়ে যে যার মতো করে অপারেশন প্রক্রিয়া চালাচ্ছেন। শুধু কি তাই! তাদের ক্লিনিক হিসাবে কোন রেজিষ্ট্রেশনও নেই। রেজিষ্ট্রেশন বিহিন একটি বাড়িতে/চেম্বারে ক্লিনিক বানিয়ে অপারেশন পরবর্তী সময়ে রোগীদের ক্ষতি হলে এ দায়িত্ব কার? দিনাজপুর সিভিল সার্জনের সাথে বিষয়টি নিয়ে মুঠোফোনে কথা হলে তিনি জানান, বিষয়টি সম্পূর্ন ভাবে অবৈধ, তবে অভিযোগ পেলাম বিষয়টি তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
Leave a Reply