তিস্তার পানি বিপদসীমার ২০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
Published on Saturday, June 20, 2020 at 11:44 pm
ডিমলা (নীলফামারী) প্রতিনিধিঃ ভারী বৃষ্টিপাত ও উজানের ঢলে গর্জে উঠেছে তিস্তা।
আজ শনিবার সকাল ৬টা থেকে নীলফামারীর ডালিয়া পয়েন্টে তিস্তা নদীর পানি
বিপদসীমার ২০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় তিস্তা অববাহিকায় বন্যা
দেখা দিয়েছে। ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রবিউল ইসলাম
বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান পরিস্থিতি সামাল দিতে দেশের সর্ববৃহৎ তিস্তা ব্যারাজের
৪৪ জলকপাট খুলে রাখা হয়েছে। তিনি জানান তিস্তা ব্যারাজের ফ্লাড বাইপাস (ফ্লাড
ফিউজ) এর কাছে ঢলের পানি এখনও ৩ ফিড নিচে থাকায় আমরা লাল সংকেত জারি করার
পরিস্থিতি হয়নি। তবে হলুদ সংকেতের মাধ্যমে তিস্তা পাড়ের মানুষজনকে নিরাপদে
থাকতে বলা হয়েছে।
সরেজমিনে দেখা যায় উজানের ঢলের শোঁ শোঁ শব্দে তিস্তাপাড় কাঁপিয়ে ভাটির দিকে
ধাপিত হচ্ছে নদীর প্রবাহ। ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোডের বন্যা পূর্বাভাস ও
সর্তকীকরণ কেন্দ্র জানায় আজ শনিবার ডালিয়া পয়েন্টের তিস্তা অববাহিকায়
বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে ৬২ মিলিমিটার। গত ৫ দিনের বৃষ্টিপাত ছিল ২২৬
মিলিমিটার। ভারী বৃস্টিপাতের সঙ্গে উজানের ঢলে তিস্তা নদীর পানি বিপদসীমা অতিক্রম
করে সকাল ৬টা থেকে ২০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এই পয়েন্টে
বিপদসীমা ৫২ দশমিক ৬০ মিটার। সুত্র মতে ডালিয়া পয়েন্টে গতকাল শুক্রবার সকাল ৬টা
থেকে তিস্তার পানি বিপদসীমার ৫ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়। সন্ধ্যা ৬টা
পানি নেমে আসে বিপদসীমার ১০ সেন্টিমিটার নিচে। ১২ ঘন্টার ব্যবধানে উক্ত
পয়েন্টে পানি বৃদ্ধি পেয়েছে ৪৫ সেন্টিমিটার।
তিস্তা ব্যারাজের উজানের ৭ কিলোমিটার অদুরে টেপাখড়িবাড়ি ইউনিয়নের
চরখড়িবাড়ি এলাকায় ¯ে^চ্ছশ্রমে নির্মিত বালির বাঁধের ৬০ মিটার ধ্বসে গেছে বলে
জানান ইউপি চেয়ারম্যান ময়নুল হক। তিনি আরো জানান ৫ নম্বর ওয়াডের টেপুর চরের
প্রায় এক হাজার পরিবার, ৪ নম্বর ওয়াডের পূর্বখড়িবাড়ি গ্রামের প্রায় ৫ শতাধিক
পরিবারের বসত ঘরে নদীর পানি প্রবেশ করেছে। এ ছাড়া চরের জমিতে বর্তমানে থাকা
বাদাম ক্ষেত গুলো তলিয়ে গেছে।
এলাকাবাসী ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা জানান, গতকাল শুক্রবার মধ্যে রাতে নদীর পানি হু-হু
করে বাড়তে থাকে। রাতে আকস্মিক নদীর পানি বাড়ায় তিস্তার চরের পরিবার নির্ঘুম রাত
কাটায়। ডিমলা উপজেলার পূর্বছাতনাই, খগাখড়িবাড়ি, টেপাখড়িবাড়ি, খালিশা
চাঁপানি, ঝুনাগাছ চাঁপানি, গয়াবাড়ি এবং জলঢাকা উপজেলার গোলমুন্ডা,
ডাউয়াবাড়ি, শৌলমারী ও কৈমারী ইউনিয়নের প্রায় ১৫টি চর তিস্তার পানিতে প্লাবিত
হয়।
খালিশা চাঁপানি ইউনিয়নের বাইশপুকুর গ্রামের স্কুলশিক্ষক বিপুল চন্দ্র সেন বলেন,
ক্রমাগত পানি বাড়ায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে গ্রামে।
ঝুনাগাছ চাপানি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আমিনুর রহমান বলেন, ছাতুনামার চর,
ফরেস্টের চর, সোনাখুলির চর ও ভেন্ডাবাড়ি চরের দেড় হাজার পরিবারের ঘরে বন্যার পানি প্রবেশ
করেছে। দক্ষিন সোনাখুলি এলাকায় তিস্তা নদীর ডান তীরের প্রধান বাঁধের অদূরে
ইউনিয়ন পরিষদের তৈরি করা মাটির বাঁধ হুমকির মুখে পড়েছে। বাঁধের ওপর দিয়ে তিস্তা
নদীর পানি লোকালয়ে প্রবেশ করায় দক্ষিণ সোনাখুলি কুঠিপাড়া গ্রামের আবাদি
জমিগুলো তলিয়ে গেছে।
খালিশা চাপানি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আতাউর রহমান সরকার বলেন, পূর্ববাইশ পুকুর ও
ছোটখাতার পাঁচ শতাধিক পরিবারের বাড়িতে বন্যার পানি প্রবেশ করেছে।
খগাখড়িবাড়ির ইউপি চেয়ারম্যান রবিউল ইসলাম লিথন বলেন, কিসামত ছাতনাই গ্রামের
৩ শতাধিক পরিবারের বাড়িতে বন্যার পানি প্রবেশ করেছে।
Leave a Reply