টেস্টের দ্বিতীয় দিনে ব্যাটসম্যানদের কিসের তাড়া
Published on Friday, March 17, 2017 at 8:45 am
বাকি মাত্র চারটি ওভার। সেখানে দাঁড়িয়ে কেন ইমরুলকে ক্রস ব্যাটে খেলতে হবে? কেন সাবি্বরকে পুল করতে হবে? আর কেনই বা সাকিবকে টি২০ ঢঙে সুইপ শটে দু-দু'বার জীবন পেতে হবে? শততম ম্যাচে এসেও টেস্টের প্রাথমিক এই পাঠদান সাকিবদের জন্য অবশ্যই বিব্রতকর, যেখানে তাদের সামনেই ৪০৫ মিনিট ক্রিজে কাটিয়ে ১৩৮ রান তুলে লংকান ব্যাটসম্যান চান্দিমাল দেখিয়ে দিয়েছেন, দায়িত্ব নিলেই কেবল 'সিনিয়র' হওয়া যায়; ধৈর্য ধরলেই শেষ তিন উইকেট নিয়ে দলের ইনিংসে আরও ১০০ রান যোগ করা যায়। সেখানে গতকাল কলম্বোয় ৯৫ রানের ওপেনিং জুটির পর শেষ আধঘণ্টায় সাকিবরা সেটাই করলেন, যা তাদের ইচ্ছা হয়েছিল! ঝুঁকিপূর্ণ শটে উন্মাদ হয়ে এদিন ১৯২ থেকে ১৯৮, মাত্র ৭ বলের ব্যবধানে ৩ উইকেট খুইয়েছে বাংলাদেশ। আর তাতেই শুরুর উচ্ছ্বাস বদলে গিয়ে রূপ নেয় শেষ বিকেলের দীর্ঘশ্বাসে। লংকান চায়নাম্যান বোলার সান্দাকানের ওই অভিশপ্ত ৫৭ নম্বর ওভারটিতেই ছন্দপতনের শুরু। উইকেট আরও একটি পড়তে পারত, যদি ভাগ্যের সহায়তা না পেতেন সাকিব। লংকানদের ৩৩৮ রানের বিপরীতে বাংলাদেশের স্কোর ৫ উইকেটে ২১৪, এখনও ১২৪ রান দূরে মুশফিকরা। এক রাতের বিরতিতে মাথা ঠাণ্ডা করে আজ যদি সাকিবরা দেখেশুনে এগিয়ে যান তাহলে হয়তো এই রান টপকে লিড নেওয়া সম্ভব। সকালে লংকান ইনিংসে লেজ ছাঁটতে গিয়েই ঘাম ছুটে গিয়েছিল বোলারদের। আট, নয় আর
দশ নম্বর জুটিতে আসে যথাক্রমে . ৫৫, ৫৫ আর ৩৩ রান। চান্দিমালের বিপক্ষে সেভাবে আক্রমণাত্মক ফিল্ডিং সাজাতে পারেননি মুশফিক। মুস্তাফিজরাও সকাল সকাল বাউন্সার আদায় করতে পারেননি। মিরাজ ফ্লাইট দিতে পারেননি। সাকিবের বলে স্লিপে হেরাথ ক্যাচ দিয়ে ফেরার পর চান্দিমাল আউট হয়েছিলেন মিরাজকে চালাতে গিয়ে। শুভাশীষের বাউন্সার পুল করতে গিয়ে লাকমলও উইকেট দিয়েছিলেন; কিন্তু ততক্ষণে ৩৩৮ রানের নিরাপদ দূরত্বে!
দ্বিতীয় সেশনের শুরুটা হয়েছিল তামিম আর সৌম্যর ওপর সব আশা রেখে। তামিম ব্যক্তিগত ২ আর ২৩ রানে মাথায় ভাগ্যের সহায়তাও পেয়েছিলেন। প্রথমে হেরাথের বলে আর পরে পেরেরার বলের লাইন মিস করেছিলেন তামিম। জোরালো আবেদনে আম্পায়ার 'নটআউট' রায় দিলেও রিভিউ নেননি হেরাথ। পরে অবশ্য নিজের বলেই নিজে সিদ্ধান্ত নিয়ে রিভিউ চেয়েছিলেন। ৪৯ রানে থাকা তামিম লাঞ্চে যাওয়ার আগের ওভারেই এলবিডবি্লউ হয়ে যান। সেবার আর আম্পায়ার আলিম দারের সিদ্ধান্ত বাঁচাতে পারেনি তামিমকে। রিপ্লেতে পরিষ্কার ফুটে ওঠে তামিম আউট। অথচ তার আগে বেশ খেলছিলেন তিনি। সৌম্যও অনেকটা তারই মতো সতর্কতার সঙ্গেই খেলছিলেন। প্রথন রানটি নিয়েছিলেন ১১ বল পরে, একসময় তার স্কোর ছিল ৫১ বলে ১৫। হেরাথ আর পেরেরাকে কভার দিয়ে সেফ শটগুলোই নিচ্ছিলেন তিনি। তবে গুনারত্নের বলগুলোতে অস্বস্তি ছিল তার। আর সে কারণেই তার এক ওভারে ১৪ রান নিয়ে গা ঝাড়া দিয়েছিলেন। বাংলাদেশি ওপেনারদের মধ্যে তামিমের পর তিনিই টানা তিন ইনিংসে হাফ সেঞ্চুরি করেছিলেন। শেষের ৫৮ বলে মাত্র একটি বাউন্ডারিই মেরেছিলেন। অদ্ভুত ব্যাপার হলো, সান্দাকানকে ডাউন দ্য উইকেটে এসে সেই বাউন্ডারি হাঁকানোর পরের বলেই ৬১ রানে বোল্ড হয়েছিলেন, এ বলটিও তিনি কিছুটা ঝুঁকে এসে চালাতে গিয়েছিলেন; কিন্তু চায়নাম্যানের সুইংটা বুঝতে পারেননি তিনি। সৌম্যর মতো ইমরুলও সান্দাকানকে বাউন্ডার হাঁকানোর পরের বলেই বোল্ড হয়েছিলেন। তবে ইমরুলের ভুল ছিল বলটি আড়াআড়ি ব্যাট চালানোতে। যদিও তার আগে লাকমলকে পুল করতে গিয়ে ২৫ রানে জীবন পেয়েছিলেন ইমরুল।
ইনিংসের মেজাজ হারানোর শুরু ওই ইমরুলকে দিয়েই। ইনিংসের নৈশপ্রহরী হিসেবে এরপর তাইজুলকে পাঠানো হলেও সান্দাকানের সুইংয়ে বিভ্রান্ত হয়ে এলবিডবি্লউ হয়ে যেতে হয় তাকে। তার ওই হ্যাটট্রিক বলে সাকিব ছিলেন সামনে, সুইপ করেই বলটি বাউন্ডারি পাঠিয়ে দেন সাকিব। ১১ রানের মাথায় স্লগ সুইপ খেলতে গিয়ে রক্ষা পান থারাঙ্গার হাত থেকে। একটি বল পর আবার লাকমালকে পুল করতে গিয়েও নিশ্চিত ক্যাচ আউট থেকে রক্ষা পান। তবে সাকিবের মতো ভাগ্য সহায় ছিল না রুম্মানের। সবাইকে এদিন কিছুটা চমকে দিয়েই চার নম্বরে নেমেছিলেন সাবি্বর। প্রথম বলেই বাউন্ডারি হাঁকিয়ে আরও অবাক করে দিয়েছিলেন। তবে মাঝে তিনিও দেখেশুনে ইনিংস এগিয়ে নিতে থাকেন। কিন্তু আগের ওভারেই দু-দুটি উইকেট পড়ে যাওয়ার পর সাবি্বর কেন যে ওই সময় লাকমলের বাউন্সার পুল করতে গেলেন, তা বোধগম্য নয়। আর সে কারণেই সম্ভাবনাময় ইনিংসটি তার শেষ হয়ে যায় ৪২ রানে। এদিন তিন-তিনজন চলি্লশের ওপর রান পেয়েছেন, অথচ তাদের কেউই সেটা চান্দিমালের মতো বড় করতে পারেননি, হতাশাটা ঠিক এখানেই।
Leave a Reply