অনুসন্ধানী প্রতিবেদন_গৃহবধু হাফিজা হত্যার নেপথ্যে
Published on Monday, July 16, 2018 at 10:15 pm
খাজানুর হায়দার লিমন:
দিনাজপুরের ফুলবাড়ী পৌরশহরের গৌরিপাড়াস্থ কাজি খানা রোডের হেকমত আলির মেয়ে হাফিজা (২৪) এর সাথে দিনাজপুর সদরের জালালপুর (এমপি) পাড়ার তমিজ উদ্দিনের ছেলে দেলোয়ারের সাথে ৫ বছর পূর্বে বিয়ে হয়। ২বছর বয়সের একটি পুত্র সন্তানও রয়েছে তাদের। ভিকটিমের পরিবারের সদস্যদের দাবী, তাকে গত ১৮ জুন হত্যা করে বাড়ীর শয়ন কক্ষে গলায় ওড়না পেচিয়ে ঝুলিয়ে রেখে আত্মহত্যা বলে চালিয়ে দেয় ঘাতক স্বামী। এই ঘটনার পর ঘাতক স্বামী পলাতক রয়েছে।
ঘটনার বিবরণে প্রকাশ, বিয়ের পর থেকেই গৃহবধু হাফিজাকে টাকার জন্য প্রায় সময় চাপ দিত দেলোয়ার। বাবার বাড়ি থেকে টাকা দিলেই সে শান্ত থাকত। এদিকে দিনাজপুর আব্দুর রহিম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মাস্টার রোলে কর্মরত দেলোয়ার বেতন ঠিকমত না পাওয়ার অজুহাত দেখিয়ে কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকা সহ চাকুরী কালীন একাধিক অনিয়ম- দূর্র্নীতির সাথে সম্পৃক্ত থাকায় প্রথমে তাকে অস্থায়ী চাকুরীচ্যুত ও পরবর্তীতে তাকে স্থায়ীভাবে চাকুরীচ্যুত করা হয়। ঘটনার এখানেই শেষ নয়। এর পর সে যুক্ত হয় মাদক সেবন ও ব্যবসার সাথে। সরেজমিনে গিয়ে তার বিরুদ্ধে এমন তথ্য বেরিয়ে এসেছে। দুই একজন বলেছে, সে ব্যবসা নয়- একজন প্রকৃত মাদকসেবী। তবে উদ্ভট ও উশৃঙ্খল স্বভাবের ছেলে দেলোয়ার বলে জানিয়েছে এলাকাবাসী। অনেকে মন্তব্য করেছে, আওয়ামী রাজনীতির ছত্র-ছাঁয়ায় থাকার কারণে সে এত বেপরোয়া স্বভাবের হয়েছে।
ঘটনার সূত্রপাতঃ গত ১৮ জুন সোমবার। তমিজের মেয়ের পুত্র সন্তানের আকিকা অনুষ্ঠানে যাবার জন্য (হাফিজা যেতে না চাইলেও) সকাল থেকে প্রচন্ড ভাবে চাপ দিতে থাকে তার স্বামী দেলোয়ার। ঠিক এই বিষয়টি নিয়ে কথা হয় ভিকটিম হাফিজার বাবা ও মার সাথে। তারা বলেন, সকাল ১১টায় আমার মেয়ে হাফিজা ফোন করে বলে ‘মা তোমার জামাই দেলোয়ার, ননদের ছেলের আকিকা অনুষ্ঠানে যাবার জন্য আমাকে মারধর করেছে। সে বলেছে (দেলোয়ার) আমি যদি না যাই আরও মারপিট করবে। মা আমি ঐখানে যাব না। তুমি তো জানো! ওরা তোমার জামাইয়ের কাছে টাকা পায়। আমি নিশ্চিত সেই টাকার জন্য ওরা ভরা মজলিশে আমাকে অপমান করতে দ্বিধাবোধ করবে না। আমি যাব না জেনে আমার শ্বশুর- শ্বাশুড়ি আমার ছেলেকে নিয়ে কিছুক্ষণ আগে আকিকা বাড়িতে চলে গেছে। মা আমার ভয় হচ্ছে! বাড়িতে দাদি শাশুড়ি ছাড়া আর কেউ নেই। মেয়ে আর্তনাদ করে বলে, ও হয়তো আবার এসে আমাকে শারীরিক ভাবে টর্চার করবে। আমি বাঁচবো না মা- তুমি আমাকে নিয়ে যাও।
এরপর বেলা ২টার সময় শেষ ফোনে কথা হয় আমার মেয়ে হাফিজার সাথে। সে বলে মা ও আমাকে আবারো মারপিট করেছে। সোফায় ফেলে গলা চেপে ধরেছে, মাথা ধরে ওয়ালের সাথে আছড়িয়েছে, মা আমি ফুলবাড়ীতে যেতে চাইলেও ও বলে তুই যাবি না, যাবে তোর লাশ। মা কেনো তোমরা চুপ করে আছো? আসো আমাকে নিয়ে যাও। এভাবে সে আর্তনাদ করে কথাগুলি বলছিল। এরপর কথা বলা অবস্থায় সংযোগটি বিচ্ছিন্ন হয়। পরবর্তীতে ফোন দিলে ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। এদিকে আমরা মেয়ের বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হওয়ার মুহুর্তে বিকেল ৪টার সময় হাফিজার শশুর ফোন দিয়ে বলে আমার মেয়ে হাফিজা নাকি তার নিজ স্বয়ন কক্ষে ফ্যানের সঙ্গে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করেছে।
ভিকটিম হাফিজার মা জানান, দেলোয়ার আমার মেয়েকে মেরে ফেলে আত্মহত্যার নাটক সাজিয়েছে। আমি আমার মেয়ে হত্যার বিচার চাই। অপরাধী দেলোয়ারের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই। সরেজমিনে গিয়ে কথা হয় ভিকটিমের শশুর শ্বাশুড়ি ও প্রত্যক্ষদর্শীদের সাথে। তারা জানান, ফ্যানের সাথে ওড়না পেঁচানো অবস্থায় ঝুলিয়েছিল। এ সময় পা মেঝেতে লাগানো ছিল। এদিকে ভিকটিমের ঝুলন্ত ছবি দেখে মনে হয় না এটি ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যার। মেরে ফেলার পর ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে এটাই সত্য। বিষয়টি নিয়ে মামলাটির তদন্ত কর্মকর্তার সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও ফোন বন্ধ থাকায় তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
Leave a Reply